Thursday, May 30, 2019

খুব কাছের দ্বীপ সেন্টেনিয়েল আইল্যাণ্ড!! এখেনো যেখানে বাস অন্ধকার জগতের রহস্যময় মানুষের!!


ভ্রমনের জন্য আপনার অঢেল টাকা আছে, প্রযুক্তি আছে, বাহন আছে- কিন্তু চাইলেই কি আপনি পৃথিবীর সব জায়গায় যেতে পারবেন? উত্তর- না।  
আর একবার সভ্যতার বাইরে- বিদ্যুত, মোবাইল ফোন, সুপেয় পানি, মজার মজার খাবার, অত্যাধুনিক চিকিৎসা, শিক্ষা সহ আমাদের যাপিত জীবনের সমস্ত উপকরণ ছাড়া নিজেকে ভাবুন তো! তাও এই একুশ শতকে!! পারবেন একদিন কাটাতে? অথচ আমাদের খুব কাছেই রয়েছেন এমন মানুষেরা। যাদের কোন শিক্ষা নেই, প্রযুক্তি নেই, সভ্যতার কোন ছোঁয়া নেই- এমনকি পোশাকও নেই। এমনকি সেখানে কত মানুষ বাস করেন, তারও কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই!!
ভালো কথা, প্রশ্ন উঠতে পারে আমাদের মানুষরা কেন তাদের কাছে সভ্যতার আলো পৌঁছে দিচ্ছে না! কারন এ পর্যন্ত বহুবার চেষ্টা করেও বিচ্ছিন্ন এই জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে মানুষ। এমনকি কেউ কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করলে তাদের জীবিত ফিরে আসার নজিরও নেই বললেই চলে। খালি হাতে তো দূরের কথা ভারতীয় বিমান সেনারা হেলিকপ্টারে গিয়েও মুহুর্মুহ তীরের আঘাতে নাস্তানাবুদ হয়ে ফিরে এসেছে। সেই থেকে ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েই ও পথ আর কাউকে মাড়াতে দেয় না। 
বিশ্বের তাক লাগানো ও ভাবনায় ফেলে দেয়ার মতো নিষিদ্ধ দ্বীপটি রয়েছে আমাদের খুব কাছেই। একসময়ের কালাপানি নামে কুখ্যাত আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের একটিই এই সেন্টেনিয়েল আইল্যাণ্ড। যেখানে গহীন জঙ্গলে এখনো সভ্যতার কোন ছোঁয়া ছাড়াই টিকে রয়েছেন অগনিত মানুষ। 
২০০৬ সালে আন্দামান দ্বীপের দুইজন জেলে এ দ্বীপের কাছাকাছি মাছ ধরতে যায়।  রাতের বেলা অত্যধিক মদ পানে ঘুমিয়ে পড়লে সমুদ্র স্রোতে ভেসে তারা দ্বীপে চলে যায়। দ্বীপ বাসীরা জেলেদের নিসংসভাবে হত্যা করে। ভারতীয় কোস্ট গার্ড জেলেদের লাশ উদ্ধার করতে হেলিকপ্টার পাঠায় দ্বীপ বাসীরা তাদের হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে তীর ছুড়তে থাকে।  যদিও উদ্ধার অভিযানে আসা হেলিকপ্টার থেকে তাঁদের মরদেহ দেখা গিয়েছিলো। উদ্ধারকারী হেলিকপ্টারের পাখার ঘূর্ণনে সৃষ্ট প্রবল বাতাদের তোড়ে সেন্টিনেলদের অল্পগভীর কবরের মাটি সরে গিয়ে ঐ দুজন জেলের মৃতদেহ দেখা যায়। কোস্ট গার্ড তীরের মুখে লাশ উদ্ধার না করেই ফিরে আসে।
এর পর ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নেয় সেন্টিনল বাসীদের জীবন যাত্রা বাইরের প্রভাবমুক্ত রাখার। ভারত সরকার তাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা রক্ষার্থে দ্বীপের তিন কিলোমিটারের মধ্যে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

সেন্টিনেলী জনগোষ্ঠী হচ্ছে আন্দামানি জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত একটি জাতিগোষ্ঠী। বঙ্গোপসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এই জাতি দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠীগুলোর একটি। গ্রেট আন্দামান উত্তর সেন্টিনেলী দ্বীপপুঞ্জে এই জনগোষ্ঠীর বাস। বহিরাগতদের ওপর আক্রমণাত্মক মনোভাবের জন্য তারা বিশেষভাবে পরিচিত। সেন্টিনেলী জাতি মূলত একটি শিকারী-নির্ভর জাতি। তারা তাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ শিকার, মাছ ধরা, এবং বন্য লতাপাতার মাধ্যমে সংগ্রহ করে। এখন পর্যন্ত তাদের মাঝে কৃষিকাজ করা বা আগুন ব্যবহারে প্রমাণ পাওয়া যায় না
 এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে সেন্টিনেলীদের জনসংখ্যার কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। ধারণা অনুযায়ী এদের জনসংখ্যা সর্বনিম্ন ৩৯ থেকে ২৫০-এর মধ্যে, এবং সর্বোচ্চ ৫০০ পর্যন্ত। ২০০১ সালে পরিচালি ভারতের জনপরিসংখ্যানে ৩৯ জন পৃথক ব্যক্তির উপস্থিতি রেকর্ড করা হয় যাদের মাঝে ২১ জন পুরুষ ও ১৮ জন নারী। নিরপত্তাজনিত কারণে এই জরিপটি প্রয়োজনের চেয়েও বেশি দূর থেকে পরিচালনা করা হয়েছিলো এবং এটি সুনিশ্চিতভাবেই ৭২ বর্গকিলোমিটার (১৮,০০০ একর) আয়তনে দ্বীপটির সঠিক জনসংখ্যা নির্দেশ করে না। ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে সংঘটিত ভূকম্পন ও সংশ্লিষ্ট সুনামির ফলে সেন্টিনেলীদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ওপর সৃষ্ট কোনো মধ্যম বা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের কথা জানা যায় না। শুধু এটুকু নিশ্চিত হওয়া যায় যে, তারা এই দুর্যোগের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হয়েছে।

 ১৯৭৫ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফির একজন পরিচালক একটা তথ্যচিত্র বানাবার উদ্দেশ্যে গিয়ে পৌঁছিয়েছিলেন সেই দ্বীপে। কিন্তু হিংস্র উপজাতিরা তার পায়ে বিষাক্ত তীর মারে ফলে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। তখন থেকেই সেখানে কারও প্রবেশাধিকার নেই। তারপর আর কেউই সেখানে যেতে খুব একটা ঝুঁকি নেয় না।
কাগজে কলমে সেন্টিনেল ভারতের অধিকারে থাকলেও বাস্তবে তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন। এখন পর্যন্ত ভারত সরকারও সেন্টিনেল দ্বীপ সম্পর্কে তেমন তথ্য সংগ্রহ করতে পারে নি। উল্লেখ্য কুট জাতি হিসেবে পরিচিত ব্রিটিশদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮৮০ সালে দ্বীপটি দখলের পায়তারা করে । এ উদ্দেশ্য তারা দ্বীপ থেকে কয়েকজন অধিবাসী ধরে নিয়ে আসে।  অপহরনের উদ্দেশ্য ছিল তাদের ভাল খাবার দাবার পরিবেশ দিয়ে তাদের মন জয় করে দ্বীপের দখল নেওয়া। কিন্ত ব্রিটিশদের এই চেষ্টা গোড়াতেই শেষ হয়ে যায় । কারন দ্বীপবাসীদের ধরে আসার পর পরই দ্বীপবাসীরা মারা । এর কারন হিসেবে ধারনা করা হয় তাদের দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। সভ্য জগত থেকে অনেক কাল দূরে থাকায় ধারনা করা হয় সর্দি-কাশির মত সাধারন রোগে এরা মারা যেতে পারে !
১৯৬৭ সাল থেকে পোর্ট ব্লেয়ারে অবস্থিত ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেন্টিনেলদের সাথে যোগাযোগ করার জন্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়ে আসছে। এসব অভিযানে তাঁদেরকে উপহার হিসেবে সমুদ্র সৈকতে খাবার ছড়িয়ে (যেমন: নারকেল) বন্ধুত্ব স্থাপনের চেষ্টা করা হয়। এসব প্রচেষ্টার মাধ্যমে সেন্টিনেলদের মধ্যে তৈরি বহিরাগতদের সম্পর্কে সৃষ্ট হিংস্র মনোভাব দূর করার চেষ্টা করা হয়। কিন্ত বাস্তবে এসব কোন কাজে আসে নি।
এর পরে ১৯৯১ সালে ভারত সরকার পুনরায় তাদের সাথে সন্ধি করার চেষ্টা করে। কিন্তু ১৯৯৬ সালে তারা জানিয়ে দেয় যে, তারা বাইরের পৃথিবীর কারও সাথে যোগাযোগ রাখতে চায় না। তারপর থেকে সেন্টিনালিসরা তাদের নির্বিঘ্ন জীবনে ফিরে যায়। পরে ২০০৪ সালের সুনামীতে দ্বীপের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। ভারত সরকার পুনরায় দ্বীপ বাসীরা বেঁচে আছে কিনা জানা জন্যে হেলিকপ্টার পাঠায় দ্বীপ বাসীরা হেলিকপ্টারের দিকে তীর ছোড়ে স্বাগত জানিয়ে জানান দেয় যে তারা বেঁচে আছে।
তো ভেবে দেখুন আমাদের জানার বাইরে এই পৃথিবীতেই কত কিছু লুকিয়ে আছে! যেগুলো জানা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা মঙ্গলগ্রহে পৌঁছাতে পারি, গ্যালাক্সি জয়ের স্বপ্নও দেখতে পারি- কিন্তুেআমাদেরই খুব কাছে লুকিয়ে থাকা অপূর্ সৃষ্টিগুলোর রহস্যভেদ করা হয়দেত আমাদের পক্ষে কখনোই সম্ভব হয়ে উঠবে না।


No comments:

Post a Comment

দিনাজপুরে লোহার খনি পেলেন বিশেষজ্ঞরা: মান অন্য যে কোন দেশের চেয়ে ভাল

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার ইসবপর গ্রামে উন্নত মানের লোহার আকরিকের (ম্যাগনেটাইট) খনির সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর ...