Sunday, May 12, 2019

ধারাবাহিক কিশোর সায়েন্স ফ্যান্টাসি- স্কুল ট্রিপে নাসা অভিযান, পর্ব-২

স্কুল ট্রিপে নাসা অভিযান, পর্ব- দুই


লাগার্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। হার্ডসন নদীর শান্ত জলের কূল ঘেষে দাঁড়ানো অপেক্ষাকৃত ছোট কিন্তু ব্যস্ততম বিমানবন্দর। ওপাশে ম্যানহাটানের সারি সারি উঁচু ভবন। পানিতে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রমোদ তরী। ভাসমান হেলিকপ্টার জেটি। মালবাহী জাহাজ। ফিশিং বোট। বেলা ২টায় বহির্গমন লাউঞ্জে দল বেঁধে বসলো শান্তনুরা। গন্তব্য ফ্লোডিডা অঙ্গরাজ্যের অলল্যা-ো। অরল্যা-োর  বিমানবন্দরের নাম ডিজনি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। বাহন ডেল্টা এয়ারলাইন্স এর ডি-৩৫২। অপেক্ষাগারের চেয়ারে হেলান দিয়ে শান্তনু। বোর্ডিং পাসে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিল। নিউ ইয়র্ক থেকে অরল্যা-ো সাড়ে ৩ ঘন্টার বিমান ভ্রমণ। পথে টেনেসি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে আধা ঘন্টার যাত্রাবিরতি ও কানেকটিং ফ্লাইট। বেলা ৩টায় বিমানের দরজা খুললো। অপেক্ষাকৃত ছোট উড়োজাহাজ। হোপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ৫৪ সদস্যের অভিযাত্রী দলের বাইরে সাধারণ যাত্রী গোটা পঞ্চাশেক। আবারো জানালার পাশে শান্তনু। সিটে বসেই গা শিউরে উঠলো অজানা আশঙ্কায়। হাত ব্যাগটা খুলে ভালো করে দেখে নিল। নিরাপত্তা তল্লাশিতে ব্যাগ খুলে দেখেছে। সন্দেহ ছিল। কিন্তু নাহ, জিনিসটা ঠিকমতোই আছে।
ফ্লোরিডার এই ভ্রমন নিছক শিক্ষা সফর নয় শান্তনুর কাছে। গেল কয়েক বছর ধরেই পরিকল্পনা এঁটেছে এই মিশনের। এবার হয়তো সত্যি হয়ে ধরা দেবে তা। ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। উত্তেজনায় দম আটকে আসছে মাঝে মাঝে। ধরা পড়লে নির্ঘাত জেল। তোলপাড় সারা বিশ্বে। সবার চোখ এড়িয়ে কিভাবে মিশন শেষ করবে তার পুরো ছক আঁকা। স্টাডি ট্যুরের পরিকল্পনা হয়েছে তিন মাস আগে। এই তিন মাসেই পরিকল্পনা গুছিয়ে নিয়েছে শান্তনু, মইনাক ও রাশেদ। এখন শুধু তা বাস্তবায়নের অপেক্ষা।
পুরো অভিযাত্রী দলে এই পরিকল্পনা জানে শুধু ওই তিনজনই। ধীরে ধীরে আকাশে ডানা মেললো ডেলটা এয়ারের বোয়িং বিমানটি। একহাতে ধরা মইনাক। অন্যহাতে রাশেদ। উড়ছে তারা। দ্রুত বেগে উঠে যাচ্ছে মধ্যাকর্ষন পেরিয়ে কোন এক অজানা গ্যালাক্সির দিকে। আশপাশে ছোট বড় নক্ষত্র। কয়েকটা রকেট শাঁই করে পাশ কাটিয়ে ছুটে গেল পেছন দিকে। মহাকাশ স্টেশনে কর্মব্যস্ত কয়েকজন নভোচারী হাত নেড়ে অভিনন্দন জানালো তিন ক্ষুদে অভিযাত্রীকে। ডানা মেলে খোলা আকাশে উড়ছে তিন বন্ধু। ওজনহীন চারপাশ। উদ্দেশ্য লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূরের কোন অজানা গ্রহ, যেখানে আছে মানুষের মতো বুদ্ধিমান কোন প্রাণী। হয়তো মানুষের চেয়ে আরও বেশি। বিশাল আকারের একটা উল্কাপি- ছুটে আসছে। দ্রুত দুই বন্ধুকে হেঁচকা টানে কক্ষপথ থেকে দুরে সরিয়ে নিল শান্তনু। উড়ছে। উড়ছে।
অন্তিম আকাশ। যেন এ যাত্রার কোন শেষ নেই। চারপাশে বর্ণিল আলোকচ্ছটা। যেন এ যাত্রার কোন ক্ষয় নেই। অনন্ত অসীম এক পথে ছুটে চলেছে তিন বন্ধু। উল্কার বেগে। কখনো আলোর গতিকে পেছনে ফেলে। পাশ কাটিয়ে শাঁই শাঁই করে ছুটে যাচ্ছে ছোট বড় তারা। গ্যালাক্সি পেরিয়ে আরেক গ্যালাক্সি। ব্ল্যাক হোল পেরিয়ে আরেক ব্ল্যাক হোলে। দূরে- বহু দুরে। এ পথ হয়তো হাজার কোটি মাইলের। হঠাৎ কি হলো ! সূর্যের পাশ দিয়ে যেতেই গলে যেতে লাগলো ইস্পাত ও ভারি প্লাষ্টিকের তৈরি ডানা। ফুটো হয়ে গেল অক্সিজেন সিলি-ার। নিচে পড়তে শুরু করলো তিন বন্ধু। উল্কার মতো। শক্ত করে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে প্রাণপন চিৎকার করছে। দরদর করে ঘামছে। বাঁচাও বাঁচাও আর্ত চিৎকার। তুমুল বেগে কাঁধ ঝাকাচ্ছিলো রাশেদ। পাশের সিটে বসা। বিমানের ১৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রাতেও ঘেমে ভিজে গেছে শান্তনু। স্বপ্ন দেখছিল। ঢকঢক করে পানি খেল।  ঘটনা বুঝতে পেরে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো রাশেদ আর মইনাক।
‘‘ তুই ওভাবে চেঁচাচ্ছিলি কেনো রে ? মিশন তো শুরুই হয়নি এখনো। ’’  কোন মতে দম আটকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল মইনাক।
বোকার হাসি হাসলো শান্তনু। স্বপ্নের কথা বললোনা কাউকে। তবু একটা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় ভারি হয়ে আছে মন। বন্ধুদের সঙ্গে হেসে নিজেকে হালকা করার চেষ্টা করছে শান্তনু। বিমান তখন ৩৫ হাজার ফুট ওপরে মেঘের সঙ্গে মিতালী পেতেছে। আর তো মাত্র কয়েক ঘন্টা। তার পরেই শুরু মিশন বিডি-০০৩। বিমান তখন অরল্যান্ডোর আকাশে। ককপিট থেকে ঘোষণা এলো অবতরণের।
‘‘ সম্মানিত যাত্রী বৃন্দ, আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা অবতরণ করতে যাচ্ছি ডিজনি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। আপনারা সিট সোজা করে বসে শক্ত করে বেল্ট এঁটে নিন, ধন্যবাদ।’’
জানালায় মুখ রাখলো শান্তনু। কড়া রোদ বাইরে। নিচে পটে আঁকা ছোট ছোট বাড়ি। গাছপালা। লেক। পানি। নৌকা। সারি সারি রাস্তা। ছুটে চলা গাড়ি। আবছা আলো। সন্ধ্যা খুব কাছাকাছি। দূরে অরল্যান্ডো শহরের সারি সারি বিজলী বাতি। প্রচ- একটা ঝাঁকুনি দিয়ে রানওয়ে স্পর্শ করলো বিমানটি। যেন স্বপ্নের দেশে পা ফেললো শান্তনু। এবার বাকি মিশনের পালা। সিকিওরিটি চেকআপ আর লাগেজ নিয়ে আরও ঘন্টাখানেক পর বাইরে বেরিয়ে এল তারা।
নাতিশীতোষ্ণ ফ্লোরিডার আকাশে তখন থালার মতো রুপালী চাঁদ। সারি সারি জ্বলছে মিটিমিটি তারাদের দল। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে আকাশের দিকে আনমনে তাকিয়ে কি যেন ভাবলো শান্তনু। তারপর জামান স্যারের তাড়া খেয়ে আগেই ঠিক করে রাখা মিনিবাসে লাগেজ ওঠালো। গন্তব্য ডিজনি রিসোর্ট। রাতটা কাটবে ওখানেই। ট্যুরের পরিকল্পনা অনুযায়ী হোটেলে লাগেজ রেখে ফ্রেশ হয়ে আধাঘন্টার মধ্যেই বেরিয়ে পড়বে তারা। গন্তব্য ডিজনি ডাউন টাউন। বিশ্বের হাজারো পর্যটক ও তাদের শিশুরা সেখানে ভিড় জমায় প্রতিরাতে। তারপর হোটেলে ফিরে ডিনার। রাত ১১টায় ঘুম। পরদিন সকাল ৭টায় ডিজনি ওয়াল্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা।
সব পরিকল্পনা ঢাকা থেকেই সেরে এসেছেন শফিক ও জামান স্যার। কাল সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ডিজনির এনিমেল কিংডম ও ম্যাজিক কিংডম ভ্রমন। সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার ডিজনিতেই। ম্যাজিক কিংডমে নান্দনিক আতশবাজি দেখে রাত সাড়ে ১০টায় হোটেলে ফিরে ডিনার ও ঘুম। পরদিন সকালে ভ্রমন তালিকায় সি ওয়ার্ল্ড। সেখানে ডলফিন, তিমি, সিল শো দেখা। ভয়ংকর সব রাইডে ওঠা। আ-ার ওয়াটার ওয়াল্ড এবং থ্রি ও ফোর ডি মুভি দেখা। তবে আজ থেকেই ঘুম নেই শান্তনুর। কিভাবে ঘুমাতে হয় যেন ভুলে গেছে।
স্যারদের অনুরোধ করে শান্তনু, মইনাক ও রাশেদ এক রুম নিয়েছে। মিশনের খুব কাছাকাছি তারা। তাই পরিকল্পনাগুলো  ঝালিয়ে নিতে হবে শেষ মুহুর্তে। সারা রাত নির্ঘুম কাটালো। পরদিন ডিজনি ওয়াল্ডের ভ্রমন আকর্ষনীয় লাগলেও মন পড়ে থাকলো শত কিলোমিটার দূরের টিটাসভিল শহরে। যে মিশন নিয়ে হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে শান্তনু ও তার দুই ঘনিষ্ট বন্ধু। যে মিশনের নাম নাসা বিডি-০০৩।

No comments:

Post a Comment

দিনাজপুরে লোহার খনি পেলেন বিশেষজ্ঞরা: মান অন্য যে কোন দেশের চেয়ে ভাল

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার ইসবপর গ্রামে উন্নত মানের লোহার আকরিকের (ম্যাগনেটাইট) খনির সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর ...