Tuesday, May 21, 2019

ধারাবাহিক কিশোর সায়েন্স ফ্যান্টাসি- স্কুল ট্রিপে নাসা অভিযান, পর্ব-৬

(ছয়)
রাত সাড়ে ৩টা। আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অরল্যাণ্ডোর ডিজনি ওয়াল্ড রিসোর্ট। ১৭ তলার বড়সড় একটা রুম। দুটো বিছানা। ডিম লাইটের আবছা আলো। একটা টেবিল। ওয়ারড্রোব। জানালায় বেশ ভারি পর্দা। জোছনা রাত। জানালার গ্লাস সরানো। মৃদু বাতাসে কেঁপে উঠছে পর্দা। শীত শীত করছে শান্তনুর। এক বিছানায় জড়াজড়ি করে শুয়েছে তিন বন্ধু। পাশের বিছানা খালি। শীত শীত ভাবে হঠাৎ ঘুম ভাঙলো শান্তনুর। বিছানা ছেড়ে জানালার পাশে দাঁড়ালো। পর্দা আরও কিছুটা সরানো। অনেকটাই নির্জন আশপাশের এলাকা। জোছনা  আর রঙ বেরঙের আলোয় অদ্ভুত সুন্দর চারপাশ। এত রাতেও রাস্তায় ছুটে চলেছে শত শত গাড়ি। তবুও কোন শব্দ নেই। কান ফাটানো হর্ণ তো আমেরিকা আসার পর থেকে শোনেনি শান্তনু।

মইনাক আর রাশেদ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। পাশে গিয়ে বসলো শান্তনু। ঘুম আসছে না। মইনাক চশমা পরে। ওর চশমাটা পাশেই পড়ে আছে বিছানায়। আলতো করে নিয়ে টেবিলে রাখলো। ঢকঢক করে পানি খেল। ঘুমের যে কি হলো আজ। বাংলাদেশে এখন দিন। খুব ইচ্ছা করছে বাবার সঙ্গে কথা বলতে। কিছু ভালো লাগছে না। কেমন যেন টেনশন হচ্ছে সব কিছু মিলে। আর মাত্র দুদিন। এই দুদিন অরল্যা-ো ভ্রমন শেষে তারা ছুটবে শত কিলোমিটার দুরের টিটাসভিল শহরে।

ভালো লাগছিল না কিছু। ঘুম যেন নির্বাসনে। বুকের ভেতরটায় কেমন যেন করছিলো। নিউইয়র্কে আসার পর শর্মি খালা একটা সিমকার্ড আর মোবাইল ফোন দিয়েছেন। স্যামসাং এর বেশ দামি ফোন। টাচ স্ক্রিন। ঢাকা থেকে আসার সময় হাতব্যাগে যতœ করে নিয়েছে প্রিয় আইপ্যাড। গোলাম সামদানি সাহেব গত বছর সিঙ্গাপুরে কি একটা মেলায় গিয়ে ছেলের জন্য এনেছিলেন। বুকের ভেতরটায় ধুকপুক করছে শান্তনুর। উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সীমা নেই। কী হয় কী হয়। বেশ নার্ভাস লাগছে। নিজেই আবার নিজেকে অভয় দিচ্ছে। এত নার্ভাস হলে হবেনা শান্তনু। তোমাকে বিশ্ব জয় করতে হবে। নতুন কিছু করে সবাইকে তাক লাগাতে হবে। মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে রুম লাগোয়া বারান্দায় গেল শান্তনু। হাতে ছোট্ট নোট বুকটা। ফুল স্লিভ একটা পাতলা গেঞ্জি। আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। একহারা গড়ন শান্তনুর। চোখে পুরু চশমা। কাছের জিনিস দেখতে অসুবিধা। বছর বছর বদলাতে হচ্ছে পাওয়ার।

বারান্দায় বেশ শীত শীত করছে। কাঁপুনি লাগছে হালকা। খারাপ লাগছে না। বারান্দায় টবে ক’টা ফুল গাছ। নাম জানেনা। কয়েকটা বাহারি ফুল সোডিয়াম আলোয় কেমন ম্যাটম্যাটে লাগছে। ছোট্ট একটা ইজি চেয়ার পাতা বারান্দায়। আকাশ জুড়ে মিটিমিটি জ্বলছে তারা। আবছা আলো অন্ধকার। দূরে ডিজনি ওয়ার্ল্ডের রাইডগুলো মৃত পড়ে আছে। চারদিকে শুনশান নীরবতা। নোটবুক হাতড়ে বাবার নাম্বার বের করলো শান্তনু।

‘হ্যালো... বাবা’
‘ কিরে ঘুমাসনি ?’
‘ঘুমিয়েছিলাম বাবা। হঠাৎ ঘুম ভাঙলো।’
‘কেন রে ? খুব টেনশন হচ্ছে বুঝি ? ’
‘জানি না বাবা, তবে কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে..আচ্ছা বাবা খেয়েছো তো দুপুরে, নাকি ভুলে গেছ আবারও ? ’
কাশি দিলেন সামদানি সাহেব।
‘ওহ আমি এলাম তিনদিন। এর মধ্যে কাশিটাও বাধিয়েছো। বাহ, একদম অনিয়ম চলবে না বাবা। ’
অট্টহাসি সামদানি সাহেবের। ‘ হাহাহা, পাগল ছেলে। ঘুমাতে যাও। আমি ঠিক আছি। অপেক্ষায় আছি তোমার মিশনের ফলাফল জানার।  এসপার নয় ওসপার। সব কিছু জেনে বুঝেই কিন্তু রাজি হয়েছি। সো.. একদম টেনশন করো না। দেখো তুমি পারবে। আই এম কনফিডেন্ট। বেষ্ট অব লাক মাই সান। ’’
‘ওকে বাবা রাখলাম । ’

ফোন রেখে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন ইজি চেয়ারে দুলুনি খেলো শান্তনু। মনটা কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। সকাল ৮টায় বেরিয়ে পড়তে হবে। গন্তব্য ডিজনি ওয়ার্ল্ড। কিন্তু ঘুম আসছে না। রাতে ভালো ঘুম না হলে সকালে খারাপ লাগবে। কোন কাজও নেই। চোখ বন্ধ। হঠাৎ মনে হলো ‘ আচ্ছা পরিকল্পনাটা একা একা ঝালিয়ে নিলে কেমন হয়।’

যেমন ভাবনা তেমনই কাজ। রুমে ঢোকার আগে ফ্রন্ট ডেস্কে জেনে নিয়েছিল এই হোটেলে ওয়াইফাই সংযোগ আছে কি না। পাসওয়ার্ডটাও টুকে রেখেছে রুম নম্বরের সঙ্গে মিলিয়ে। উঠে সোজা রুমে। হাতব্যাগ থেকে আইপ্যাড বের করে ওয়াইফাই কানেক্ট করলো। যদিও ঢাকা থেকে প্রাথমিক পরিকল্পনা সেরে এসেছে। খালি বিছানায় গা এলিয়ে আইপ্যাড এ নিমগ্ন শান্তনু। গুগল এ সার্চ দিল নাসা লিখে। হাজার হাজার রেজাল্ট। প্রাথমিক কিছু তথ্য টুকে রাখলো নতুন করে নোটপ্যাডে।

নাসা (Nasa) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। এর সম্পূর্ণ নাম National Aeronautics and Space Administration। ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থার সদর দফতর ওয়াাশিংটন ডিসিতে অবস্থিত। পূর্বতন নাকা (ন্যাশনাল অ্যাডভাজরি কমিটি ফর অ্যারোনটিক্স) বিলুপ্ত হয়ে ১৯৫৮ সালের ২৯ জুলাই ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাক্ট অনুসারে প্রতিষ্ঠিত হয় নাসা। মার্কিন মহাকাশ যাত্রায় এই প্রতিষ্ঠানে ভূমিকা অ্যাপোলো চন্দ্রযাত্রা, স্কাইল্যাব মহাকাশ স্টেশন ও স্পেস শাটল ইত্যাদিতে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে।

শান্তুনু এসেছে ফ্লোরিডায়। নাসা ফ্লোরিডা লিখে সার্চ দিল আবার। হাজারো ওয়েব পেজ বেরিয়ে এল অনুসন্ধান পাতায়। নোট নিল যতœ করে। নাসা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন প্রকল্পের সাথে যুক্ত ৫টি সংস্থার একটি। এর মধ্যে ফ্লোরিডায় নাসার জন এফ কেনেডি স্পেস সেন্টারটি অবস্থিত। জন এফ কেনেডি স্পেস সেন্টারটি ফ্লোরিডার টিটাসভিল (ঞরঃঁংারষষব) শহরের পাশে আটলান্টিক উপকূলে মেরিট আইল্যান্ড (গবৎৎরঃঃ ওংষধহফ) নামক একটি দ্বীপে অবস্থিত। এই স্পেস সেন্টার থেকে নাসার নভোযান উৎক্ষেপণ করা হয়ে থাকে। নভোযান উৎক্ষেপনের সব সুবিধা এখানে রয়েছে। এখানে একটি দর্শনার্থী কেন্দ্র এবং স্পেস সেন্টারের মূল অংশে বাস ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে। যা ফ্লোরিডা ভ্রমণে আসা প্রচুর পযর্টককে এ স্থানটি দর্শনে আকৃষ্ট করছে।

নাসা সংক্রান্ত প্রাথমিক বেশ কিছু তথ্য উপাত্ত খুঁজে নোট বুকে তা টুকে রাখলো শান্তনু। ঘড়িতে তখন ভোর ৫টা। চোখে কিছুটা ঘুমের ছায়া খেলা করতে লাগলো। হাই উঠছে ঘন ঘন। মইনাক ও রাশেদ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।  ফোনে সকাল ৭টায় এলার্ম দিয়ে জড়াজড়ি দুই বন্ধুর পাশে কোনমতে শুয়ে পড়লো শান্তনু। পাশে পড়ে থাকলো খালি বিছানা। একটা কলম। নোটপ্যাড। রাজ্যের যতো ঘুম যেন এসে ভর করলো শান্তনুর ওপর। খুব বেশি ক্লান্ত। পরিশ্রান্ত। শোবার কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমের অতলে হারিয়ে গেল শান্তনু।
)

No comments:

Post a Comment

দিনাজপুরে লোহার খনি পেলেন বিশেষজ্ঞরা: মান অন্য যে কোন দেশের চেয়ে ভাল

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার ইসবপর গ্রামে উন্নত মানের লোহার আকরিকের (ম্যাগনেটাইট) খনির সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর ...