Saturday, May 18, 2019

ধারাবাহিক কিশোর সায়েন্স ফ্যান্টাসি- স্কুল ট্রিপে নাসা অভিযান, পর্ব-৫



(পাঁচ)
টানা পাঁচ বছরের গবেষণায় উচ্চমাত্রার শব্দ তরঙ্গ রুপান্তরের মডুলেটর ডিজাইন করতে পেরেছে শান্তনু। এইতো মাস ছয়েক আগে। কিন্তু এগুলো মানুষ সৃষ্ট বিভিন্ন যন্ত্র থেকে উৎপন্ন শব্দ। আসল পরীক্ষা বহুদুরে। পেতে হবে ভিন গ্রহের কোন অজানা প্রাণীর শব্দ। সেই যে স্বপ্নে এল, তারপর বাস্তবে তো ধরা দিল না। শুধু কানে ভাসে ‘চি হি হি চি চি শো শো পো’।
গবেষনার চুড়ান্ত পর্যায়ে শান্তনু সঙ্গে নিয়েছে মইনাক ও রাশেদকে। উৎসাহ যুগিয়েছেন সামদানি সাহেব। লেকের পাশের শোবার ঘরটায় চলেছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। ওই ঘরেই ল্যাবরেটরি বানানো হয়েছে। বরাবরের মতোই কছিমউদ্দিন দাদু গবেষনার গিনিপিগ। তিনি উচ্চ স্বরে শব্দ করবেন ‘চি হি হি চি চি শো শো পো’। সেই শব্দ নেয়া হলো রিসিভারে। তারপর তা ছুঁড়ে দিল ট্রান্সমিটার। অন্য ঘরে বসে শান্তনু রিসিভারে সেই শব্দ রুপান্তরের খেলায় মেতেছে।
সামদানি সাহেবের বেশ উচ্চ ধারনা ছেলেকে নিয়ে। তিনি স্বপ্ন দেখেন এই ছোট্ট শান্তনু ঠিক একদিন বিশ্ব জয় করবে। পেটেন্ট হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে তাই চুড়ান্ত পরীক্ষার আগে কোনভাবেই এই চারজনের বাইরে প্রজেক্টটির ধারনা ফাঁস করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা। প্রজেক্টের সবচেয়ে বড় সাফল্য যে কোন হাই ফ্রিকোন্সেরি শব্দকে রুপান্তর করা যায়। আর এই রুপান্তরের পরে তা রিসিভারে শোনা যায় মাতৃভাষা বাংলায়। মডুলেটর আবিস্কারের পর কতো রাত যে খালি গায়ে ছাদে শুয়ে এলিয়েনের অপেক্ষায় থেকেছে তার অন্ত নেই। এলিয়েন আসেনা।
প্রজেক্টটির সবচেয়ে বড় অসুবিধা খুঁজে বের করেছেন সামদানি সাহেব। এই মডুলেটর এত বেশি উচ্চমাত্রার শব্দ গ্রহন ও তা রুপান্তর করতে পারে, তা বিশেষায়িত কিছু যন্ত্র ছাড়া উৎপন্ন করা সম্ভব না। তবে ভিন্ন গ্রহের কোন প্রাণী অথবা ভিন্ন কোন গ্যালাক্সির উচ্চ মাত্রার শব্দ পেলে তা খুব সহজেই রুপান্তর করে বাংলায় শোনা সম্ভব। সবচেয়ে বড় অসুবিধা যে ট্রান্সমিটার এবং একটি রিসিভার সমৃদ্ধ ডিভাইসটি মহাকাশে পাঠাতে হবে। কিন্তু সে সুযোগ কোথায় ? রকেট বানানো অথবা রকেটের অর্থের যোগান দেয়া শান্তনুদের কাছে কল্পনাতীত।
মধ্যরাতে ছাদে খালি গায়ে ছেলের পাশে শুয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন সামদানি সাহেব।
‘‘ বুঝেছিস শান্তনু, তুই যে এত্ত বড় একটা যুগান্তকারী আবিস্কার করলি। এখন এটা বাস্তবায়নের জন্য তো তার চেয়েও অনেক বড় কিছু বানাতে হবে। হাহাহাহাহা ’’
শান্তনুর সরল উত্তর ‘ কী বানাতে হবে বলো বাবা দেখবা ঠিক বানায়া ফেলছি ’’।
ছেলের সরল উত্তরে মুগ্ধ শান্তনু সাহেব। হাসেন।
‘‘ বোকা ছেলে। ধরে এখন যদি আমাদের একটা প্রাইভেট রকেট থাকতো তাহলে বাপ বেটা মিলে এই ট্রান্সমিটার আর রিসিভার পাঠাতাম  আরেকটি রিসিভার থাকতো আমাদের কাছে। তা কি আর সম্ভব বেটা ? ’’
‘‘ সম্ভব বাবা। মানুষের ইচ্ছাশক্তির কাছে অসম্ভব বলে কিছু নেই বাবা। দেখো আমরা ঠিক একদিন রকেট পাঠাবো আকাশে। তারপর যুগান্তকারী আবিস্কারে বদলে দেবো প্রচলিত সব ধারনা’’। প্রত্যয়ী উত্তর শান্তনুর।
‘‘ সাবাশ বেটা। ঠিক বড়দের মতো করে কথা বললি। দোয়া করি তুই আসমানে পৌঁছে যা। ভেঙে ফেল সব পুরনো ধ্যান ধারনা। অনেক বড় হও বাবা।’’
আবেগে বুকে জড়িয়ে নেন শান্তনুকে। ঠিক এভাবে কতো রাত বুকে আগলে রেখেছিল মা। মা আজ নেই। শান্তনুর অনেক মন খারাপ লাগতে থাকে। বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে শান্তনু। বুঝতে পারেন সামদানি সাহেব। তিনিও ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন।
রাত গভীর হতে থাকে। পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ে অর্ধেকটা চাঁদ। মেঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে থাকে। আধো আলো , আধো অন্ধকারে দু’চোখে অবিরাম জল গড়াতে থাকে বাবা ছেলের। শনশনে বাতাস আসে। ফোটা ফোটা বৃষ্টি ছুঁয়ে দিতে থাকে দুজনের অনাবৃত পিঠ। ঝপ করে নেমে আসে বৃষ্টি। কাঁদতে থাকেন সামদানি সাহেব। কাঁদে শান্তনু। তার চেয়ে বড় বেশি কান্না নিয়ে শেষ রাতের পৃথিবীতে নেমে আসে মেঘেদের দল। আজ যেন আকাশেরও মন খারাপ। ভিজতে থাকে বাবা ছেলে। ছেলেকে আরও শক্ত করে বুকে টেনে নেন সামদানি সাহেব।
অসময়ের বৃষ্টি মানুষকে আবেগপ্রবণ করে তোলে। নষ্টালজিয়া গ্রাস করে। ফিরিয়ে নিয়ে যায় ছোটবেলায়। মামাবাড়ির আমবাগান। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। বাড়ির পেছনের টইটুম্বুর বিল। বিলের পানিতে জলের ফোটা ঝমঝম করে আছড়ে পড়ে। বড়শি হাতে আধাভেজা দুপুর। বিকেল। কতো সময়। পেছনে চলে যায় কতো বর্ষন মূখর সন্ধ্যা। ফিরে আসেনা আর। এই ধানম-ির লেকভিউ এপার্টমেন্টের বারান্দাতেও কতো বর্ষায় কৃষ্ণচুড়ার রঙে হারিয়েছেন সামদানি সাহ্বে। সাথে প্রয়াত স্ত্রী শাহানারা বেগম। রিম ঝিম বৃষ্টি। মুড়ি মাখানো। বেশি বেশি পেঁয়াজ। কাঁচা মরিচ। বাড়ি থেকে আসা ঘানিতে মাড়ানো খাঁটি সরিষার তেল। আহা। আর কি কখনো আসবে সেই দিন। আসেনা।
আবেগে তলিয়ে যেতে থাকেন সামদানি সাহেব। গলা খুলে গাইতে থাকেন। কণ্ঠ মেলায় শান্তনুও। অকাল বর্ষন ভিজিয়ে দেয় পিতা পুত্রের ভেতর বাহির। দুরে ল্যাম্পপোষ্টের ঠিক নিচে ঝরে পড়তে থাকে সারি সারি বৃষ্টি। পূবাকাশ ফর্সা হয়ে আসে। গভীর ঘুমে অচেতন নগরী। জেগে থাকেন সামদানি সাহেব আর শান্তনু। ধানম-ির লেক ভিউ এপার্টমেন্টের ছাদে বৃষ্টি বিলাসে মেতে ওঠেন। হারিয়ে যান আবেগের অতলে। ছেলের কাঁধ জড়িয়ে ছাদের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে হাঁটেন সামদানি সাহেব। গলা ছেড়ে গাইতে থাকেন।
আজি   ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে
জানি নে,   জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না ॥
এই   চঞ্চল সজল পবন-বেগে  উদ্ভ্রান্ত মেঘে   মন চায়
মন চায়   ওই বলাকার পথখানি নিতে চিনে॥
মেঘমল্লার সারা দিনমান।
বাজে ঝরনার গান।
মন হারাবার আজি বেলা,   পথ ভুলিবার খেলা-- মন চায়
মন চায়  হৃদয় জড়াতে কার চিরঋণে॥

No comments:

Post a Comment

দিনাজপুরে লোহার খনি পেলেন বিশেষজ্ঞরা: মান অন্য যে কোন দেশের চেয়ে ভাল

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার ইসবপর গ্রামে উন্নত মানের লোহার আকরিকের (ম্যাগনেটাইট) খনির সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর ...