Tuesday, May 14, 2019

কিশোর সায়েন্স ফ্যান্টাসি- স্কুল ট্রিপে নাসা অভিযান, পর্ব-৩

কিশোর সায়েন্স ফ্যান্টাসি- স্কুল ট্রিপে নাসা অভিযান, পর্ব-৩


শান্তনুর বাবা গোলাম সামদানি। ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার। চাকুরি করেন বেসরকারি একটা রেডিওতে। পদ চিফ অব ব্রডকাস্ট অপারেশন। শান্তনুর ভাই বোন নেই। একা। গত বছর মা মারা গেছেন ক্যান্সারে। সামদানি সাহেব ভালো মানুষ। সদালাপী। বন্ধুবৎসল। বেশিরভাগ সময় অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকেন। ছোটবেলা থেকেই বাবার ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশের প্রেমে পড়ে শান্তনু। ধানম-িতে বাসা। লেকের পাড়ে নিরিবিলি যে এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, তার চার তলায়। লেকভিউ এপার্টমেন্ট। অনেক দিন অসুস্থ ছিলেন শান্তনুর মা। তখন থেকেই একাকীত্ব ভর করে শান্তনুর মগজে। স্কুলের অবসরে বসে যেত বাবার কিছু বই নিয়ে। যেগুলোর পাতায় পাতায় ইলেকট্রনিক্স পরিচিতি আর ডায়াগ্রাম। বিশেষ করে লেভেল সিক্সে পড়ার সময় মাথায় পোকা ঢোকে ইলেকট্রনিক্স এর। লেকের পাড় ঘেষে পাঁচতলা সমান রক্তরঙা কৃষ্ণচুড়ার ফাক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে কতো বিকেল বা সন্ধ্যা কেটেছে বারান্দায়। তবে বেশিরভাগ সময়টা কেটেছে বাবার কম্পিউটারে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স এবং এস্ট্রোনমিক্যাল বা মহাকাশবিদ্যার ওয়েবসাইটে ঢু মেরে।
শান্তনু অন্যরকম মেধাবী। লেভেল সিক্সেই ও শিখে ফেলেছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং জাভা, সি++ আর ওরাকল। শিখেছে ওয়েব পেইজ ডিজাইনের টুকটাক কাজও। কম্পিউটার আর ইলেকট্্রনিক্স যেন ধ্যান জ্ঞান। অবশ্য এতে সামদানি সাহেবের অবদান কম নয়। কাজের অবসরে বাকি সময়টুকু ব্যয় করেন শান্তনুর পেছনেই। সমর্থন দেন। উৎসাহ যোগান। বিশেষ করে মা মারা যাওয়ার পর বড় একা হয়ে যায় শান্তনু। তখন থেকে গ্রামের দুসম্পর্কের এক দাদু কছিম উদ্দিন এসে থাকেন বাসায়। ফুট ফরমাশ খাটেন। বাজার করেন। বাসায় আরেকজন সদস্য আছেন। আছিয়া খালা। কাজের বুয়া হিসেবে তিনি নিজেকে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। রান্না করেন। ঘর দোর মোছেন। আর শান্তনু বেশিরভাগ সময়ই ব্যস্ত থাকে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডায়াগ্রাম নিয়ে।
জন্মের সময় বেশ জটিলতা দেখা দিয়েছিল শান্তনুর। মা ছিলেন মৃত্যু শয্যায়। একলামসিয়া হয়েছিল। তখন থেকেই শান্তনু একটু অন্যরকম। আর দশটা শিশুর মতো নয় তার আচরণ। তার মেধা অসাধারণ। ডাক্টারও দেখিয়েছেন সামদানি সাহেব। তারা এই লক্ষনগুলোকে অটিস্টিক শিশুদের গুনাবলীর সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চেয়েছেন। মা এ নিয়ে অনেক সময় মন খারাপ করে থাকতেন। বুঝতে দিতেন না। শান্তনু সাধারণ পড়াশোনায় খুব একটা ভালো না। কিন্তু বিজ্ঞান, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স আর অ্যাস্ট্রোনমিতে এক কথায় অসাধারণ। যেন প্রকৃতি তাকে এসব বিষয় শিখিয়ে মায়ের কোলে পাঠিয়েছে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছেন সামদানি সাহেব। তাই ছোটবেলা থেকেই এসব বিষয়ে তাকে আরও উৎসাহ যুগিয়েছেন। শান্তনুও ডুবে থাকতো এসবের মধ্যেই। যেন নিজস্ব একটা ইলেকট্রনিক্স এর জগৎ তৈরি করে নিয়েছে সে নিজের ভেতর।
এমন অনেক দিন গেছে ডায়াগ্রামে ডুবে আছে। আছিয়া খালাকে দুধ হাতে দাঁড় করিয়ে রেখেছে এক ঘন্টা। ডায়াগ্রামের জটিল অংক মিলিয়ে তারপর হাতে নিয়েছে দুধের গ্লাস। কছিম উদ্দিন দাদু তো রীতিমত অতিষ্ঠ এই ইলেকট্রনিক্স প্রীতি নিয়ে। নতুন কোন ডায়াগ্রামের গিনিপিগ কছিম উদ্দিন। তার ওপরেই প্রথম পরীক্ষা চলে। একবার কি একটা ডায়াগ্রাম বানালো। যে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র দিয়ে ধেড়ে ইদুর শিকার করা যায়। কছিম উদ্দিনের ওপর চললো পরীক্ষা। তার কেনে আঙুল আটকে গেল যন্ত্রে। তিনি সেটি নিয়ে ছুটে বেড়ালেন পুরো বাড়ি। চিৎকার করে পাড়া জানান দিলেন। শান্তনু এ ঘটনায় হেসে কুটি কুটি। এ যেন ইলেকট্রনিক্স দুনিয়ার সঙ্গে ভালোবাসার মেলবন্ধন।
সামদানি সাহেবও  যতোটা সম্ভব চেষ্টা করেন শান্তনুকে মায়ের অভাব বুঝতে না দিতে। তাইতো সময়ে অসময়ে ছুটে আসেন বাসায়। ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন কাছের কোন ফুড কোর্ট বা শপিংমলে। হাসি আনন্দে ভরিয়ে রাখার চেষ্টা করেন শান্তনুর ছোট্ট জীবন। তবুও কী যেন নেই শান্তনুর। বাবার অনুপস্থিতিতে মায়ের ছবি বুকে জড়িয়ে হু হু করে কাঁদে। বিছানায় গড়াগড়ি খায় আর ডাকতে থাকে ‘‘ মা... মা ও মা ...একবার আসো না মা..’’। বালিশ ভেজায়। দরজার আড়ালে আঁচলে দাঁত খুটে ফুপিয়ে কাদেন আছিয়া খালা। দীর্ঘশ্বাস ভারি হয় ধানমণ্ডির এই স্বপ্ন গৃহে।

(তিন)

No comments:

Post a Comment

দিনাজপুরে লোহার খনি পেলেন বিশেষজ্ঞরা: মান অন্য যে কোন দেশের চেয়ে ভাল

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার ইসবপর গ্রামে উন্নত মানের লোহার আকরিকের (ম্যাগনেটাইট) খনির সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর ...