
আকাশ বড় প্রিয় শান্তনুর। গোলাম সামদানি সাহেবও আকাশ প্রেমী। বাতাসে ইথার তরঙ্গ ছড়িয়ে দিয়ে তিনি মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেন শব্দ, গান- কথামালা। এই ইথার আকাশে পাঠান। কি এক অদ্ভুত কম্পমান তরঙ্গ। ওঠানামা করে। তরঙ্গ নিয়ে খেলা করেন। মেগা হার্টজ, কিলো হার্টজ এ বন্দি করে বাতাসে ছুঁড়ে দেন শব্দ মালা। অন্ধকার রাতে শীতলপাটি নিয়ে ছুটে যান ছাদে। বাবা ছেলে মিলে চিৎ হয়ে শুয়ে বুক মেলে দেন আকাশে। অন্ধকারে দু’জোড়া চোখ খুঁজে বেড়ায় ধুমকেতু, নীহারিকা বা দূরের কোন নক্ষত্র। খালি গায়ে ছাদে শুয়ে ছেলেকে শেখান তাদের নাম। সাত ভাই চম্পার গল্প শোনান। শোনান শুকতারা আর ধ্রুবতারার গল্প। সেই সিক্স গ্রেড থেকে তাই আকাশপ্রেমী হয়ে ওঠে শান্তনু।
বাবা অফিসের কাজে বাইরে গেলে রাতে একা ছাদে শুয়ে আকাশ দেখে। ভেসে বেড়ায় কল্পনার জগতে। যে জগতে গিজগিজ করে ইলেকট্রনিক্স, ইথার তরঙ্গ, গ্যালাক্সি, নক্ষত্র সব কিছুই। অদৃশ্য শব্দ আর তরঙ্গমালা এসে ধরা দেয় কানে। মানুষের শ্রবণক্ষম যে শব্দ তার চেয়ে হাজার গুন বেশি শব্দ নিয়ে ভাবতে থাকে চোখ বন্ধ করে। আঁকতে থাকে স্বপ্নের ডায়াগ্রাম। বাতাসে আঙুলকে কলম বানিয়ে চলতে থাকে জটিল সব হিসেব নিকেষ। যে গণিতে হাজার কোটি কিলোমিটার পথেও বাতাস ছাড়া বিচ্ছিন্ন হবেনা যোগাযোগ। থাকবে রিমোট কন্ট্রোল সুবিধা। খালি গায়ে শুয়ে কল্পনায় ছবি আঁকে দুরের অদৃশ্য কোন গ্যালাক্সির। কখনো ঘুমিয়ে পড়ে শীতলপাটিতে। স্বপ্ন দেখে। আলোর বেগে ছুটে আসে বেশ কিছু মহাকাশযান।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ঢাকা। উড়ন্ত একটি শাদা আগুনের গোলক ছুটে আসে শান্তনুদের ছাদে। তীব্র আলোয় চোখ ধাধিয়ে যায় শান্তনুর। ছোট হয়ে আসে চোখ। আগুনের গোলকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে দুটো কিম্ভুত কিমাকার প্রাণী। বিচিত্র সব শব্দ তরঙ্গ ছুড়ে দেয় ঢাকার বাতাসে। কিছুই বুঝতে পারেনা শান্তনু। চি হি হি চি চি শো শো পো.... এমন অনুভূতি হতে থাকে কানে। যেন পর্দা ফেটে ঢুকে যাবে শব্দ তরঙ্গ। সামদানি সাহেব থাকলে হয়তো মেপে দেখার চেষ্টা করতেন কতো কিলোহার্টজ বা মেগাহার্টজে উৎপন্ন হচ্ছে শব্দগুলো। হয়তো বা শর্ট ওয়েভ বা মাইক্রো ওয়েভে ছড়ানো হচ্ছে, তাও তিনি খুঁজে দেখার চেষ্টা করতেন। কিছুই বুঝতে পারেনা শান্তনু। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে। প্রাণীদুটো আবার মিলিয়ে যায় আগুনের গোলকে। হাত নাড়ে। বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে শান্তনু। চোখের পলকে মিশে যায় বিশালাকায় আগুনের গোলকটি।
তখনও শান্তনুর কানে বাজতে থাকে চি হি হি চি চি শো শো পো। এর কোন মানে বুঝতে পারেনা। বোঝা সম্ভব নয় হয়তো যে কোন মানুষের পক্ষে। শান্তনুর মাথায় প্রশ্ন খেলে যায়। আচ্ছা পৃথিবীতে এখনো পর্যন্ত কি কোন সাউ- মডুলেটর আবিস্কৃত হয়েছে যার মাধ্যমে এই তরঙ্গ রুপান্তর ঘটিয়ে মানুষের শ্রবণযোগ্য করা যায়। এমন কি কোন যন্ত্র আছে যার মাধ্যমে এই অতিপ্রাকৃত শব্দ মানুষের বোধগম্য করা যায় ?
ঘুমের ঘোরেই ছুটে বাসায় ফিরে যায় শান্তনু। বসে যায় উইকিপিডিয়া আর গুগল অনুসন্ধানে। সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ দেয় ‘চি হি হি চি চি শো শো পো’ লিখে। এক হাজার সাতষট্টিটি অনুসন্ধান পেইজ বেরিয়ে আসে। কিন্তু কোনটিতেই তেমন যুতসই কোন তথ্য পায়না শান্তনু। তার মনে হতে থাকে, আসলে এ ধরনের উচ্চ তরঙ্গের শব্দ রুপান্তরে কোন সিমুলেটর বা মডুলেটর আবিস্কৃত হয়নি আজও। যদি তা হতো তাহলে খুব সহজেই বোঝা যেত ভিন গ্রহের প্রাণীদের ভাষা। হয়তো ওই দুজন কিছু একটা বলতে চেয়েছে শান্তনুকে। কিন্তু শান্তনুর মানব মস্তিস্কের এ্যান্টেনায় তা কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনি। শুধু কানে বেজেছে উচ্চমাত্রার কটা শব্দ ‘চি হি হি চি চি শো শো পো’।
নতুন কিছু একটা করার ভুত চাপে শান্তনুর মাথায়। শব্দ তরঙ্গ রুপান্তরের খেলায় মেতে ওঠে দিন রাত। কি করে রুপান্তর ঘটানো যায় অতি প্রাকৃত এই শব্দ তরঙ্গের। যা উদঘাটনে হয়তো বেরিয়ে আসবে এই মহাবিশ্বের অপার রহস্যের খ-িত কিছু অংশ। নাওয়া খাওয়া ভুলে মডুলেটর তৈরিতে নেমে পড়ে শান্তনু। এই স্বপ্ন যে তাকে সফল করতেই হবে।
No comments:
Post a Comment