Sunday, June 16, 2019

হেল প্লানেট COROT-7B: যেখানে হয় কাঁচ পাথরের বৃষ্টি

ধরে নিন- আপনি যে পৃথিবীতে আছেন তার দিনের তাপমাত্রা ২৬০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যার ভূ-অভ্যন্তরের তাপমাত্রা মোটামুটি ৪৭০০ ডিগ্রী! সেখানেও মেঘ জমছে, বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের পৃথিবীতে মাঝে মধ্যে ব্যাঙ, মাছ বা এসিড বৃষ্টির কথা শোনা যায়। কিন্তু সেই গ্রহে পাথরের মেঘ জমছে, বৃষ্টি পড়ছে পাথরের এমনকি উচ্চ তাপমাত্রায় গলিত পাথরের সিলিকা থেকে কাঁচ তৈরি হয়ে ঝরছে অঝোরে। সেই বৃষ্টি গিয়ে জমছে গলিত লাভার হ্রদে।
এ তো গেল বৃষ্টি! বাতাস তো থাকবেই এর সঙ্গে। আমরা যেখানে আছি- অর্থাৎ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বেগে ঝড় বা টর্নেডোর রেকর্ড হয়ত আমরা অনেকেই জানি। না জানলেও সমস্যা নেই, আমেরিকার ওকলাহামায় ১৯৯৯ সালে পৃথিবীর সব থেকে বেশি বেগে টর্নেডো হয়েছিল। সেখানে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৩০০ মাইল। এবার ভাবুন আপনি যে পাথুরে দুনিয়ায় আছেন সেখানে সাধারণত বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৫৪০০ মাইল বা ৮৭০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দাঁড়ায়। যা শব্দের গতির থেকে সাতগুন বেশি। এ তো সাধারণ সময়ের বাতাস, ঝড়ের সময়? সর্বনাশ, ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। ঝড়ের সময় সেখানে বাতাসের বেগ দাঁড়ায় ঘন্টায় ২১৭৭৪ মাইল। আমাদের জানামতে মহাবিশ্বে এটাই সবচেয়ে বেশি বাতাসের গতিবেগ। যার গতিবেগ শব্দের গতির থেকে প্রায় ২৯ গুন বেশি। 

শুনতে অবাক লাগছে? অবিশ্বাসও হতে পারে অনেকের। এমন একটি গ্রহ ‘‘কোরট-৭বি’’ রয়েছে আমাদের গ্যালাক্সি বা সৌরজগতের একটু বাইরে। পৃথিবী থেকে সেখানে যদি আপনি যেতে চান, আলোর গতিতে গেলে সেখানে পৌঁছাতে লাগবে কমপক্ষে ৫৫০ থেকে ৬০০ বছর!! এটি আমাদের সৌরজগতের বাইরে আবিস্কৃত প্রথম গ্রহ, যা দেখতে অনেকটা পৃথিবীর মতোই। ২০০৯ সালে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সিগুলো দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কোরট স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে এটি আবিস্কার করা হয়। গ্রহটি আকারে পৃথিবীর প্রায় দ্বিগুন হলেও ভর পৃথিবীর প্রায় পাঁচগুন বেশি। গ্রহটি তার সূর্যের খুব কাছাকাছি অবস্থিত, যার দূরত্ব আনুমানিক ১.৬ মিলিয়ন মাইল। সেই গ্যালাক্সির সূর্যের এত কাছাকাছি থাকার কারনেই গ্রহটি এ যাবৎকালে আবিস্কৃত গ্রহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত ও আবহাওয়া খুবই অন্যরকম বলে মনে করা হয়।  তাই অনেক শীতল পৃথিবীর বিপরীতে, COROT-7b এর বায়ুমণ্ডলে পরিচিত গ্যাস (কার্বন ডাই অক্সাইড, জল বাষ্প, নাইট্রোজেন) নেই বললেই চলে। এর পরিবর্তে সেখানকার বায়ুমন্ডলে শিলায় পরিপূর্ণ।
সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ব্রুস ফিগলি জুনিয়র বলেন, "এই বস্তুটি কেবলমাত্র লাভা লেক বা লাভা সমুদ্রের গরম গলিত সিলিকেটগুলি থেকে উদ্ভূত তরঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়।"
COROT-7b এর বায়ুমণ্ডলটি কেমন হতে পারে তা খুঁজে বের করতে, তার সহকর্মীরা Fegleyand এটিকে মডেল করেছিলেন। তারা দেখেছে যে COROT-7b এর বায়ুমণ্ডলগুলি পাথরের উপাদানগুলির থেকে তৈরি এবং যখন সামনের দিকে অগ্রসর হয়, তখন বায়ু থেকে বৃষ্টি ঝরে নীচের গলিত লাভাগুলির হ্রদে পতিত হয়।
"সোডিয়াম, পটাসিয়াম, সিলিকন মনোক্সাইড এবং তারপরে অক্সিজেন হয় কিনা পরমাণু বা আণবিক অক্সিজেন?" কিন্তু ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং লোহা যেমন অলঙ্কৃত শিলা পাওয়া অন্যান্য উপাদান ছোট পরিমাণে আছে।
শিলা বৃষ্টি পৃথিবীর পানির আবহাওয়ার অনুরূপ গঠন করে: "যখন আপনি উচ্চতর যান তখন বায়ুমন্ডলে শীতল হয়ে যায় এবং আপনি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পানির সাথে স্বাদুপ্রবাহের মতো বিভিন্ন ধরণের 'শিলা' দিয়ে সম্পৃক্ত হন।" একটি জল মেঘ গঠন এবং তারপর বৃষ্টিপাত, একটি 'শিলা মেঘ' গঠন করে এবং এটি বিভিন্ন ধরনের শিলা ছোট কাঁটার বৃষ্টি শুরু। "
এক্সপ্ল্যানেট এ অ্যাসেনস্টাইট, কর্ডডাম, স্পিনেল এবং উইলস্টোনাইট খনিজ পাওয়া যেতে পারে। সেখানে মৌলিক সোডিয়াম এবং পটাসিয়াম, যা পাথরের তুলনায় খুব হলেও মেঘে মিশে যায় এবং উচ্চ তাপমাত্রাযুক্ত উজ্জ্বল কমলা মেঘ তৈরি করে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভা অবজারভেটরির ড. ডিডিয়ার কোয়েলজ এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। তিনি বলেন, এই আবিস্কারটি রোমাঞ্চকর এবং আশ্চর্যজনক। 
ইউরোপীয় দক্ষিণ ওষুধের লা সিলা ওয়েবসার্টারিতে উচ্চ নির্ভুলতা রেডিয়াল-ভেলোসিটি প্ল্যানেট সার্চার (HARPS) যন্ত্র দ্বারা সংগৃহীত নতুন ডেটা থেকে এই মানগুলি নির্ধারণ করা হয়েছে। 
COROT-7b তার তারকায় প্রতি ঘন্টায় ৭ লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটার গতির সূর্যকে ঘিরে ঘুরতে থাকে। যার ঘূর্ণনগতি সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর গতির তুলনায় সাতগুণ বেশি। যা প্রতি ১৭ ঘন্টায় তার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
বিজ্ঞানীরা এখনো গ্রহটিকে নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা করে যাচ্ছেন। মানুষের পক্ষে কোন একদিন হয়তো এই মহাবিশ্ব ছাড়িয়ে অন্য সৌরজগতে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু এই মুহুর্তে ৫শ আলোকবর্ষ দূরের কোন গ্রহে যাওয়ার চিন্তাও করার কোন অবকাশ নেই, কারন এই মুহুর্তে পৃথিবী থেকে ওই গ্রহের কাছাকাছি পৌঁছাতে মানুষকে প্রায় অমর হতে হবে, যা কল্পনাতীত।  
সূত্র- ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি, গুগল, ইউটিউব।

No comments:

Post a Comment

দিনাজপুরে লোহার খনি পেলেন বিশেষজ্ঞরা: মান অন্য যে কোন দেশের চেয়ে ভাল

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার ইসবপর গ্রামে উন্নত মানের লোহার আকরিকের (ম্যাগনেটাইট) খনির সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর ...